আপনি যদি গাড়ি পাগল হন তবে অবশ্যই আপনি Fast & Furious সিরিজটি দেখেছেন। আপনি মুভিগুলি পছন্দ নাও করতে পারেন তবে আপনার হৃদয়টি রেসিং গাড়িগুলির গিয়ার শিফটিং এবং তিব্র গতির প্রেমে পড়ে গিয়েছিল এবং আপনি আনন্দ পাচ্ছিলেন।
ক্যামেরায় যখন বারবার দেখায় যে কিভাবে ক্লাচ না চেপে গিয়ার শিফটিং করছে আর স্পিডের কাটা কতো দ্রুত উপরে উঠছে এগুলো যে আপনার শরীরের ইফেক্ট করে না তা কিন্তু অস্বীকার করতে পারবেন না।
এগুলো সবাই করতে চায় কিন্তু যারা অটোমেটিক ট্রান্সমিশনে অভ্যস্ত তারা চাইলেই দ্বিধা দ্বন্দ্বের কারণে করতে পারে না (কারণ ম্যানুয়াল অভ্যস্ত মাত্র ১৩ % লোক, এমনকি কানাডার মতো দেশে ৩%যুবক ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশনে অভ্যস্ত)।
আর এই সমস্যার সমাধান করেছে টিপট্রনিক ট্রান্সমিশন ।

বর্তমানে গিয়ার সিলেকশন এর ব্যাপারে গাড়ি প্রেমিকরা লিটেরালি দুটো ভাগে ভাগ হয়ে যায় এক পক্ষ যায় ম্যানুয়ালে আরেকপক্ষ যায় অটোতে।দেখা যায় উভয় পক্ষই নিজেদেরকে জেতার জন্য তর্ক বিতর্ক পর্যন্ত শুরু করে দেয় কেউ বলে অটোমেটিক খুব ভালো কেউ বলে ম্যানুয়াল ছাড়া মজাই নাই।
যাক আমরা ঝগড়াঝাঁটি বাদ দেই ,চলুন একটু গভীরে চলে যাই।

1930 এর দশকের শেষভাগে টিপট্রোনিক গিয়ার শিফ্টের ধারণা নিয়ে আলোচনায় আসেন
প্যাকার্ড এবং ক্রিইসলার এবং তারাই মুলত এটার প্রকৃত অটোমেকার ছিলেন। তারা এমন একটি সেমি অটোমেটিক গিয়ার তৈরি করতে সক্ষম হোন যা গিয়ার শিফট চলাকালীন
সময়েও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্লাচকে সংযুক্ত বা বিভক্ত করে নিতে পারে।(ম্যানুয়াল মুড)

বর্তমানে আধুনিক বিশ্বে ভক্সওয়াগেন-অডি এই গ্রুপটি মুলত ট্রিপট্রনিক গিয়ারকে এক অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে যুক্ত করেছে। এছাড়াও আজকাল আপনি বিভিন্ন ফার্স্ট-ক্লাস ব্র্যান্ড যেমন: বিএমডাব্লু, মার্সিডিজ-বেঞ্জ, অডি, পোরশে এবং এদের পাশাপাশি কিছু স্ট্যান্ডার্ড ভেহিক্যাল কোম্পানি যেমন সিট্রোইন সেনসোড্রাইভ, হোন্ডা আইশিফ্ট, ক্রিইসলার অটোস্টিক এবং আরও কিছু ব্রান্ডে আপনি এই গিয়ার সিস্টেম দেখতে পাবেন।
টিপট্রনিক ট্রান্সমিশন ও হলো এক ধরনের অটোমেটিক ট্রান্সমিশন সিস্টেম যা অটো মুডের গিয়ার লিভার ব্যবহার করে গিয়ারের পরিবর্তন করতে পারে তাছাড়া স্টিয়ারিং হুইলের পিছনে প্যাডেলগুলি অর্থাৎ আপশিফ্ট এবং ডাউনশিফ্টের লিভার ব্যবহার করে গিয়ারের পরিবর্তন করতে পারে যা চালককে এক অথেনটিক অনুভূতি দেয়।
জানিয়ে রাখছি টিপট্রোনিক নামটি একটি নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক যা গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান পোর্শের মালিকানাধীন। টিপট্রনিকে ম্যানুয়াল শিফটিংটি আপ-শিফটিংয়ের জন্য প্লাস চিহ্ন এবং ডাউন-শিফটিংয়ের জন্য একটি মাইনাস চিহ্নিত বাটন বা লিভারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এটি মুলত স্পোর্টস কারের প্রকৃত অনুভূতি দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়। প্রথমে সিস্টেমটি মূলত পোরশে দ্বারা উত্পাদিত হয়েছিল(প্রথম বাজারজাত করে পোর্শে)পরবর্তীতে পদ্ধতিটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একই নামে এই প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে।
একমাত্র টিপট্রোনিক গিয়ারই ড্রাইভারদের চুজেন অপশন দেয় যে তারা অটোমেটিক মুডে চালাবে না ম্যানুয়াল মুডে , ড্রাইভারের কমান্ড অনুযায়ী গাড়ির অভ্যন্তরের ইসিইউ/ কন্ট্রোলার গিয়ার শিফটিং বা ম্যানুয়াল মোড করে যেখানে ড্রাইভারদের গিয়ার পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে।
অন্যান্য গিয়ার সিস্টেম শুধুমাত্র আপনি যে কোন একটি চুজ করতে পারেন আর সেটা হয় অটোমেটিক নয়তো ম্যানুয়াল কিন্তু টিপট্রনিকে আপনি ২টাই চুজ করতে পারেন।

টিপট্রোনিক গিয়ার, ম্যানুমেটিক ট্রান্সমিশন নামেও পরিচিত,যা ড্রাইভার কে ক্লাচের ঝামেলা ছাড়াই গিয়ার্স পরিবর্তন করতে দেয়।
এই গিয়ার সিস্টেমটিতে অন্তর্নির্মিত সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য রয়েছে যাতে ড্রাইভারের ত্রুটির কারনে গিয়ারবক্সেকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে।
এই প্রযুক্তিটি অন্য উত্পাদনকারীদের মন জুড়িয়ে নেই তাই
ভক্সওয়াগেন, বুগাটি, ল্যাম্বোরগিনি, অডি,সিয়াট, স্কোদা এবং ল্যান্ড রোভারের তাদের ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স করে নেন।

টিপট্রনিক ট্রান্সমিশনের কীভাবে কাজ করে?
এই সিস্টেমের কাজের ব্যবস্থাটি জটিল বলে মনে হতে পারে কারণ এটি উভয়ই ট্রান্সমিশন কৌশলকে ব্যবহার করে।
এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে এটির দুটি মোড রয়েছে –
১)অটোমেটিক ট্রানস্মিশন এবং ২)ম্যানুয়াল শিফ্টার

অটোমেটিক মুড: -এই মুডে গাড়ির ECU পুরো ট্রান্সমিশন সিস্টেমটি নিয়ন্ত্রণ করে, ড্রাইভারকে ব্রেক এবং এক্সিলারেটর পরিচালনা করা ছাড়া আর কিছুই করার প্রয়োজন হয় না। এই মুডটি অপেশাদার ড্রাইভারের জন্য উপযুক্ত ।আপনি যদি কোনও শহরের মধ্যে এই মুডে গাড়ি চালাচ্ছেন এটি আপনাকে বারবার ক্লাচ চাপা আর গিয়ার পরিবর্তনের প্যারা দিবে না
আপনাকে অনায়াসে চালাতে সাহায্য করবে।

ম্যানুয়াল মুড – এটি গিয়ারের শিফটিংকে সুনির্দিষ্টভাবে চালিত করার জন্য ড্রাইভারকে সহজ ভাবে সাহায্য করে।
ড্রাইভার যখন আপশিফ্ট বা ডাউনশিফ্ট পজিশনে পরিবর্তন করে তখন এর ecu অভ্যন্তরীণ ট্রান্সমিশনের গিয়ার গুলো অ্যাকিউইটেটর ভাবে পড়তে সাহায্য করে। যার ফলে ড্রাইভার ম্যানুয়াল গাড়ি চালানোর এক অথেনটিক অনুভূতি লাভ করে।

টিপট্রোনিক_গিয়ার_শিফ্টের_সবিধা:
একটি টিপট্রোনিক গিয়ারবক্স ড্রাইভারকে দুটি ওয়েতে চালাতে সাহায্য করে ।
আপশিফ্ট এবং ডাউনশিফ্ট ম্যানুয়ালি পরিচালনা করতে দেয় ম্যানুয়ালের বিকল্প হিসেবে অটোমেটিক মুডটি ওভাররাইড করার পরে, ড্রাইভার গিয়ার শিফটের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সুতরাং বলা যায় ঐতিহ্যবাহী অটো ট্রান্সমিশনের বৈশিষ্ট্যগুলি উপভোগ করার সাথে সাথে ইচ্ছাকৃত ডাউনশিফ্টের সাথে ব্রেকিং আউটপুটটি কমিয়ে বা বাড়িয়ে গাড়ির এক্সিলারেশন বাড়ানোও বেশ সম্ভব। টিপট্রনিক প্রযুক্তির অনন্য সুবিধাগুলো হলো
১) গিয়ার কন্ট্রোল ড্রাইভার এবং গাড়ির ecu দিয়ে দুই ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যা একজন এক্সপেরিয়েন্সড এবং নতুন ড্রাইভার দুজনের জন্যই উপযুক্ত।
২) ম্যানুয়ালি আপসিফ্ট এবং ডাউনশিফ্টের মাধ্যমে গাড়িকে অধিক বেশি নিয়ন্ত্রণ করা যায়
৩) টিপট্রনিক গিয়ার অটো সেফটি সিস্টেম হিসেবে কাজ করে, যখন ড্রাইভার ম্যানুয়াল মুড়ে চালানোর সময় কোনো কারণে যদি আরপিএম মিটারের রেড লাইন ক্রস করছ তা যদি ড্রাইভার এর কন্ট্রোল এর বাইরে চলে যাই মানে ইঞ্জিনের পাওয়ার অনুযায়ী আপশিফ্টার কাজ না করে তখন কন্ট্রোলার অটোমেটিক্যালি ইয়ারকে ম্যানুয়াল মোড থেকে অটো মোডে ডাইভার্ট করে দেয়।
এবং আরপিএম অনুযায়ী গতির সামজস্য হলে সেটি পুনরায় আবার ম্যানুয়াল মুডে চলে যায়।
৪) এই মেকানিজম এতই মজার যে যে চালাবে সেই এটার প্রেমে পড়ে যাবে।
শেষাংশে বলবো ,
টিপট্রনিক গিয়ার এমন একটি গিয়ার মেকানিজম যেখানে গাড়িচালক অটো এবং ম্যানুয়াল উভয় মুডেই সবচেয়ে ভাল ফিল দেয়। গিয়ার মেকানিজমের অন্তর্নির্মিত সুরক্ষা বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে আপনি এটাতে ক্লাচ না চেপেও গিয়ার শিফট করতে পারবেন এবং পুরোপুরি ম্যানুয়ালের মজায় মগ্ন থাকবেন। এছাড়া টিপট্রনিক গিয়ারে গাড়ি চালানোর সময় ড্রাইভিং এর ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়।

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ।