সড়ক পরিবহনে নতুন আইনে ২৫,০০০ টাকা জরিমানা শুনার পরে আপনারা অনেকেই ইনবক্সে নক দিচ্ছেন কিভাবে লাইসেন্স করবেন। তাই একটু ডিটেইলসে বোঝানোর চেষ্টা করছি কিভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হয়।
মূল কথা শুরু হওয়ার আগে কিছু কথা বলে নেই।
ড্রাইভিং লাইসেন্স দুই প্রকার। যথা:-
১) পেশাদার লাইসেন্স
২) অপেশাদার লাইসেন্স
তাহলে চলুন খুবই সংক্ষেপে এই দুটো ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে আপনাদের সাথে একটু আলোচনা করে নেই।
১) পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স:- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স মূলত সেইসব ভাই-ব্রাদারদের জন্য যারা ড্রাইভিং কে পেশা হিসেবে নিতে চাচ্ছেন। যেমন:- বাস ড্রাইভার,ট্রাক ড্রাইভার, উবার ড্রাইভার।
একটি পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ থাকে পাঁচ বছর পর্যন্ত। পাঁচ বছর পরে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়।সেই ক্ষেত্রে বিআরটিএ’র সাথে যোগাযোগ করে নতুন কার্ড করে নিতে হয়।
২) অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স:- অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স মূলত সেই সব ভাই ব্রাদারদের জন্য যারা নিজেই নিজের যানবাহনটি কে চালাতে ভালোবাসেন। যেমন:- মোটরসাইকেল, পার্সোনাল কার-মাইক্রো।
সাধারণত এই ড্রাইভিং লাইসেন্স টি আমাদের মাঝে খুব বেশি প্রচলিত। এই ড্রাইভিং লাইসেন্স শুধু মোটরসাইকেলের জন্য করতে পারবেন এবং মোটরসাইকেল কার মাইক্রোবাস উভয়ের জন্য করতে পারবেন।
তাহলে চলুন এখন জেনে নেই যে ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে করবেন কোন প্রকার ঘুষ বা দালালের সাহায্য ছাড়াই।
প্রথম পদক্ষেপ:- বিআরটিএ-তে যে একটি ফরম তুলতে হবে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর। ফরমটি বিনামূল্যে হলেও অনেক জায়গায় এই ফরমটি দুই টাকা মূল্যে কিনতে হয়।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ:- ফরমটি ফিলাপ করতে হবে ছবিসহ এবং তাতে ফার্স্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসার কে দিয়ে সত্যায়িত করে নিতে হবে।
তৃতীয় পদক্ষেপ:- ফরমটি পূরণ হয়ে গেলে আপনাকে ব্যাংকে ব্যাংকে যে ৫১৮ টাকা জমা দিতে হবে।
চতুর্থ পদক্ষেপ:- টাকা জমা দেওয়া শেষে আপনাকে পুনরায় বিআরটিএ-তে আসতে হবে। টাকা জমা দেওয়ার রশিদ সহ যে ফরমটি আপনি পূরণ করেছেন সেই ফরমটি বিআরটিএ-তে জমা দিতে হবে। তখন বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ আপনাকে ওই ফরমটিতে তাদের নিজস্ব সিল মেরে স্বাক্ষর করে জমা নিয়ে নিবে। জমা নেয়া আগে তৎক্ষণাৎ আপনাকে তার একটি ফটো কপি করে নিজের কাছে রেখে দিতে হবে। যা রাস্তায় লার্নার নামে পরিচিত।
পঞ্চম পদক্ষেপ:- লার্নার নিয়া আপনি বাসায় আসে গুম দিবেন।ঠিক ২১ এর মধ্যে ওরা আপনাকে এসএমএস দিবে।তখন আপনাকে বিআরটিএ তে যেয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর পরীক্ষার এডমিট কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। এর পরে আপনি পুনরায় বাসায় এসে ঘুম দেবেন।
ষষ্ঠ পদক্ষেপ:- ড্রাইভিং লাইসেন্স এর তিনটা পরীক্ষা হয়।যথা:-
১)লিখিত পরীক্ষা।
২ জিকজ্যাগ পরীক্ষা
৩)মৌখিক পরীক্ষা
এগুলো সম্পর্কে পড়াশোনা করতে হবে এবং জানতে হবে।
সপ্তম পদক্ষেপ:-এডমিট কার্ডের মধ্যে যে ডেট দেয়া আছে ওই ডেটের মধ্যে আপনাকে পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে।
প্রথম দিন হবে লিখিত পরীক্ষা। যদি সেটাতে পাশ করতে পারেন তাহলে তার পরের দিন হবে জিকজ্যাক পরীক্ষা। যেখানে আপনাকে মোটরসাইকেল চালাতে হবে এঁকেবেঁকে সাপের মত করে। এই পরীক্ষার শর্ত হলো আপনার মোটরসাইকেল স্টার্ট বন্ধ হওয়া যাবে না এবং আপনার পা নামানো যাবে না। যদি এই দুটো কাজ হয়ে থাকে তাহলে আপনি ডিসকোয়ালিফাই হয়ে যাবেন।যদি আপনি এই পরীক্ষায় পাশ করতে পারেন তাহলে সেই দিন সন্ধ্যার সময় অথবা পরের দিন সকালবেলা আপনাকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। যেখানে আপনাকে বিভিন্ন যানবাহন চালানোর নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে ও আপনি পাশ করে যান তাহলে আপনার এডমিট কার্ডে পাস লিখে দেবে কর্তৃপক্ষ তাদের একটি সীল মেরে দেবে। তখন আপনি এক কেজি মিষ্টি নিয়ে বাসায় চলে আসবেন।
অষ্টম পদক্ষেপ:- এই পাশ করা এডমিট কার্ডটি নিয়ে আপনাকে ১৪ দিন পরে আবার বিআরটিএ-তে যোগাযোগ করে একটি ব্যাংকের টাকা জমা দেওয়ার রশিদ নিতে হবে এবং ব্যাংকে ২৫৪২ টাকা জমা দিতে হবে।
নবম পদক্ষেপ:-টাকা জমা দেওয়ার রশিদ নিয়ে আপনাকে সোজা বিআরটিএ-তে দেহে জমা দিতে হবে। তখন তারা আপনার অ্যাডমিট কার্ড এবং ব্যাংক জমার রশিদ জমা নিয়ে আপনাকে একটি রশিদ দেবে যেখানে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর নাম্বার এবং তাদের শীল, স্বাক্ষর দেয়া থাকবে।
এটাই আপনার অস্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স।
দশম পদক্ষেপ:-ওই রশিদ এর মধ্যে যে ডেট থাকবে সেই ডেটে আপনাকে বিআরটিএ-তে যোগাযোগ করতে হবে যদি আপনার কাছে কোন এসএমএস অথবা ফোন না আসে।
এগারোতম পদক্ষেপ:-বিআরটিএ তে যোগাযোগ করলে অথবা এসএমএস আসলে আপনাকে বিআরটিএ-তে যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার ডেট নিয়ে নিতে হবে।এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেয়ার দিতে আপনাকে বিআরটিএ-তে যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে ছবি উঠিয়ে চলে আসতে হবে।
এরপরে অনন্তকাল অপেক্ষা।
কখনো তিনমাস,কখনো চার মাস,কখনো পাঁচ মাস পরে আপনার স্মার্ট কার্ড চলে আসবে। তখন আপনার মোবাইলে এসএমএস আসবে আপনি বিআরটিএ-তে যে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করে নিতে পারবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:-
১) সমস্ত প্রক্রিয়া খুব একটা জটিল প্রক্রিয়া নয়। চাইলে নিজে করে দেখতেই পারেন।
২) এইখানে যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যেই হয়ে যেতে পারে অথবা তার বেশিও সময় লাগতে পারে।
৩)এই সময়ের মধ্যে আপনাকে বিআরটিএ’র সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।
আশা করি এই পোস্ট থেকে আপনাদের অনেক উপকার হবে।