যদি আপনার গাড়িতে কি-লেস এন্ট্রি বা রিমোট এন্ট্রি সিস্টেম থাকে তাহলে সবার আগে দুটো কথা আপনার মাথায় আসতে পারে,

★ কি এমন কাজ করে যে টিপ দিলেই দরজা আনলক হয়ে যায়, আবার ২০ মিটার দূর থেকেও কিভাবে কাজ করতে পারে?
★ এটা কি সিকিউর? অন্য কেউ আমার গাড়ি কি আনলক করে ফেলতে পারবে?

এই লিখায় এই ব্যাপারগুলোই বোঝানোর চেষ্টা করব আজ। কিভাবে কি-লেস এন্ট্রি বা রিমোট এন্ট্রি সিস্টেম কাজ করে ; একটা কি দিয়ে কি অন্য গাড়ি আনলক করা যাবে নাকি।

সাধারণত আনলক করার জন্য চাবিতে একটা ট্রান্সমিটার থাকে যেটা একটা সিগন্যাল কোড পাঠায় গাড়ির মধ্যে থাকা রিসিভারে। এবং এই কোড ব্যাবহার করেই গাড়ি আনলক হয়। এখন যদি পার্কিং লটে অনেকগুলো গাড়ির মধ্যে একটা চাবি দিয়ে অন্য গাড়িগুলো আনলক করা যায় তাহলে সেটা আসলেই বড় সমস্যা।

এজন্য অবশ্যই গাড়ির চাবি যে সিগন্যাল কোডটা পাঠায় সেটা গোপন থাকতে হবে। না হয় সেই কোড ব্যাবহার করে যে কেই রি-ট্রান্সমিট করে গাড়ি আনলক করে ফেলতে পারবে।

একটা ছোট্ট ট্রান্সমিটার চিপ ব্যাবহার করা হয় গাড়ির কি রিমোটে ট্রান্সমিটার হিসেবে, যেটা সিলভারের তৈরি। মর্ডান কি গুলোতে যে কোড ব্যাবহার করে কার আনলক করা হয় সেটাকে বলে হোপিং কোড যেটা 40 বিটের; একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে এই 40 বিটের হোপিং কোড প্রায় ১ ট্রিলিয়ন পসিবল কোড উৎপন্ন করতে পারে! কিভাবে? চলুন দেখা যাক,

এই ট্রান্সমিটার চিপটা সবসময় 40 বিটের একটা কোড জেনারেট করে রাখে, যখন আপনি কি চাপেন তখন ট্রান্সমিটার এই কোডটা গাড়িতে পাঠায় এবং সাথে একটা ফাংশান কোডও পাঠায় যেটাতে বলা থাকে যে আপনি কি ডোর লক করতে চাচ্ছেন,বা আনলক করতে চাচ্ছেন নাকি ট্রাঙ্ক খুলতে চাচ্ছেন।

গাড়িতে একটা রিসিভার থাকে যেটা ওই একই 40 বিটের কোড ধরে রাখে, যখন দুই কোডের ম্যাচ হয় তখন গাড়ি ফাংশান কোড অনুযায়ী দরজা খুলে দেয় বা বন্ধ করে। যদি কোড ম্যাচ না করে তাহলে কিছুই হবেনা।

চাবির ট্রান্সমিটার আর গাড়ির রিসিভার দুটোই একই সুডো- রেনডম কোড জেনারেটর ইউজ করে। মানে ট্রান্সমিটার আর রিসিভার দুটোই একই মেথড ব্যাবহার করে। যখন ট্রান্সমিটার একটা কোড পাঠিয়ে ফেলে তখন সে নতুন আরেকটা কোড নেয় তার মেমোরি থেকে। ঠিক একইভাবে গাড়ির রিসিভারেও এই একই কোডগুলো মেমোরি করা থাকে, তাই যখন কোড ম্যাচ করে ফেলে তখন আনলক বা লক হয়ে যায়।


ধরুন আপনি গাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে আছেন, আপনি ভুলে চাবি প্রেস করে দিলেন তখন ট্রান্সমিটার আর রিসিভার কিন্ত তাদের টাইমিং ঠিক রাখতে পারবেনা কারন দূরত্ব বেশী। তখন গাড়ি কিভাবে সিদ্ধান্ত নিবে যে কি করবে?

ওয়েল তখন গাড়ির রিসিভার পরবর্তী ২৫৬ টা কোড একসেপ্ট করে কাজ করবে! মানে যদি এক কিলোমিটার দূর থেকে চাবি ২৫৬ বার প্রেস করেন তাহলে ডোর আনলক হবে। চিন্তা করবেন না যদি কেউ সত্তিই ২৫৬ বার চাবি প্রেসও করেও তখন গাড়ি টোটালি কোড গুলোকে ইগনোর করবে এবং ম্যাচ করলেও আনলক করবেনা।

তো যদি কেই সত্তিই ২৫৬ বার চাবি প্রেস করে ফেলে ( ধরুন আপনার তিন বছরের বাচ্চা ) তখন স্বাভাবিক ভাবেই রিসিভার কোড একসেপ্ট করা বন্ধ করে দিবে, তখন কিভাবে আবার রিসিভারকে নরমাল এ্যাকশানে নিয়ে আসা যাবে? এভাবে,

1. ইগনিশন চাবিকে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ৮ বার অন অফ করবেন। এটা আপনার গাড়ির সিকিউরিটি সিস্টেমকে প্রোগ্রামিং মোডে নিয়ে যাবে।
2. যে ট্রান্সমিটার দিয়ে রিসিভ করাতে চান সেটার বাটন প্রেস করবেন, প্রায় সবগুলো গাড়ি সর্বোচ্চ ৪টা ট্রান্সমিটার একসেপ্ট করে।
3. ইগনিশন সুইচ অফ করে দিবেন।

40 বিটের কোড জেনারেট করে, চারটা ট্রান্সমিটারের ১বিলিয়ন বারের মধ্যে একবার আরেকজনের গাড়ির দরজা খোলার চান্স থাকে। বুঝতেই পারছেন কি পরিমাণ সিকিউর। এছাড়াও প্রতিটা ম্যানুফ্যাকচারার তাদের তাদের আলাদা আলাদা পদ্ধতি ব্যাবহার করে কি- লেস এন্ট্রির জন্য। আবার এখন বিটের সংখ্যাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তো দেখতেই পাচ্ছেন আরেকজনের চাবি দিয়ে আপনার গাড়ি আনলক হওয়াটা একরকম অসম্ভব।